আয়েশা সিদ্দিকা। বয়স মাত্র ২০। এই বয়সেই তিনি যেন বনে গেলেন সাইবার ক্রাইম জগতের রানী। স্বামী ও দেবরসহ আরও কয়েকজনকে সহযোগী করে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলে অনলাইন জগতে বিস্তৃত করলেন প্রতারণার জাল।
তার নেতৃত্বেই ভয়ঙ্কর সেই অপরাধী চক্র আরেকজনের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুক পেইজ খুলে একের পর এক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে থাকে লক্ষ লক্ষ টাকা।
তবে এসব করে পার পাননি আয়েশা। ৪ সহযোগীসহ গ্রেফতার হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯ এর হাতে।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি সোমেন মজুমদার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে শত শত গ্রাহককে পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি র্যাবের নজরে আসে। র্যাব জানতে পারে, বিভিন্ন লােভনীয় অফারের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে সাধারণ জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। বিভিন্ন পণ্য বিক্রির নামে ফেসবুক পেইজ ওপেন করে চলছে এসব প্রতারণা। ফলে অনেক মানুষ সরল বিশ্বাসে প্রতারিত হচ্ছেন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এভাবে প্রতারিত হন সিলেট নগরীর বাসিন্দা ডা. নিষ্ঠা চক্রবর্তী। তিনি ‘চারু নিকেতন’ পেজের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার পর সাধারণ ডায়েরি করেন সিলেট জালালাবাদ থানায়। পাশাপাশি তিনি র্যাব-৯ এর কাছেও অভিযােগ করেন।
অভিযােগ পেয়ে র্যাব-৯ নামে তদন্তে। অত্যন্ত কৌশলী এবং অনলাইন কার্যক্রমে পারদর্শী এই প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৪ মাস গােয়েন্দা তৎপরতার এক পর্যায়ে ৩০ এপ্রিল (শনিবার) র্যাব-৯ এর একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকার বাকলিয়া থানার নোমান কলেজ রোড এলাকার ১নং গলির লায়লা ফকিরের বাড়ি (বাসা-২৪৩) থেকে চক্রের মূল হােতা আয়েশাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত বাকি ৪ জন হচ্ছেন- চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানার নোমান কলেজ রোড এলাকার ১নং গলির লায়লা ফকিরের বাড়ির নুরুল ইসলামের ছেলে ও আয়েশা স্বামী আব্দুল আল মোমেন বাক্কার (২৬), বাক্কারের ভাই মো. ওসমান সরোয়ার (২৩), বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার কাঠিপাড়া গ্রামের মো. বুলু শেখের ছেলে মো. বাবর আলী শেখ (২৫) ও এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্ণফুলি থানার দক্ষিণপুর শিকলবাহা গ্রামের মোহাম্মদ আলী মিয়ার ছেলে মো. মেহেদী হাসান (১৯)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬টি মােবাইল ফোন এবং ৭টি সিম উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের সিলেট নিয়ে এসে জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করে র্যাব-৯।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, আয়েশা সিদ্দিকা ‘চারু নিকেতন’ নামক পেইজের এডমিন এবং বাকিরা তার সহযােগী। এছাড়াও আরও কয়েকজন এ চক্রের সাথে যুক্ত।
র্যাব জানায়, আয়েশা সিদ্দিকা প্রথমে ‘Next Your Shopping’ নামক একটি অনলাইন পেইজের মাধ্যমে কাপড় বিক্রি করতেন। কিন্তু ছয় মাস আগে তিনি প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে ‘চারু নিকেতন’ নামক পেইজ ওপেন করেন। তার এই পেইজের বর্তমান ফলােয়ার সংখ্যা সাত হাজারের অধিক। কম দামে এবং কিস্তিতে আকর্ষণীয় ডিজাইনের গহনা বিক্রির পােস্ট দিয়ে মানুষের- বিশেষ করে নারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। ক্রেতারা পেইজে নক করে বিস্তারিত জানতে চাইলে বলা হতো- পণ্য কিনতে হলে অ্যাডভান্স ৫০% টাকা বিকাশ করতে হবে। কাস্টমার অ্যাডভান্স বিকাশ করলে এই প্রতারকরা নিতো আরেক প্রতারণার আশ্রয়। ভুয়া কুরিয়ার স্লিপের ছবি পাঠানাে হতাে ক্রেতাদের মেসেঞ্জারে।
এরপর যখন দেরি হতাে তখন এই প্রতারক চক্র আরাে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য টালবাহানা করতো। একপর্যায়ে ভুক্তভােগী ক্রেতাকে ম্যাসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে ব্লক করে দিতো এ চক্র। এভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে এ পর্যন্ত আড়াই শ থেকে তিন শ ব্যক্তির নিকট থেকে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আয়েশা ও তার সহযোগীরা।
এদিকে, এ প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত আত্মগোপনে থানা অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।